বাংলাদেশের একমাত্র জলাবন রাতারগুল

প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৫ সময়ঃ ১:৩৫ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১:৩৮ অপরাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক, প্রতিক্ষণ ডটকম

05বিশাল জলাভূমির মধ্যে কোমর ডুবিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি বৃক্ষ। চারপাশে বিশাল খোলা প্রান্তর। তা-ও আবার জলে ভরা। মাঝখানটায় ছোট এক খণ্ড সবুজ জঙ্গল। একপাশ দিয়ে আবার বয়ে গেছে পাহাড়ি খরস্রোতা সারি নদী।

এ বনের ডালে ডালে ঘুরে বেড়ায় নানা জাতের বন্যপ্রাণী আর পাখপাখালি। সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় এ জলাবনের নাম রাতারগুল। বাংলাদেশের একমাত্র জলাবন এটিই। এ বন অনেকটাই আমাজনের মতো। ভেতরের দিকে জঙ্গলের গভীরতা এতই বেশি যে, সূর্যের আলো কোথাও কোথাও জল ছুঁতে পারে না।

সিলেট বন বিভাগের উত্তর সিলেট রেঞ্জের প্রায় ৩ হাজার ৩২১ একর জায়গাজুড়ে রাতারগুল জলাবনের অবস্থান। এর মধ্যে ৫০৪ একর জায়গায় মূল বন, বাকি জায়গা জলাশয় আর সামান্য কিছু উঁচু জায়গা। তবে বর্ষা ও বর্ষা-পরবর্তী সময়ে পুরো এলাকাটিই জলে ডুবে থাকে। শীতে প্রায় শুকিয়ে যায় এ বন। সে সময় কেবল জল থাকে বনের ভেতরে খনন করা বড় জলাশয়গুলোতে।

পুরনো দুটি বড় জলাশয় ছাড়াও ২০১০-১১ সালে রাতারগুল বনের ভেতরে পাখির আবাসস্থল হিসেবে ৩.৬ বর্গকিলোমিটারের একটি বড় লেকও খনন করা হয়। বর্ষাকালে রাতারগুল জঙ্গলে পানি অনেক বেশি বেড়ে যায়। তখন বনের কোথাও কোথাও গভীরতা থাকে ২৫ ফুটেরও বেশি গভীর।

0,,17789280_303,00বাংলাদেশ বন বিভাগ ১৯৭৩ সালকে রাতারগুল বনের ৫০৪ একর এলাকাকে বন্যপ্রাণী অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করে। এ বনে দেখা যায় নানা প্রজাতির পাখি।

এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল মাছরাঙা, বিভিন্ন প্রজাতির বক, ঘুঘু, ফিঙ্গে, বালি হাঁস, পানকৌড়ি ইত্যাদি। বন্যপ্রাণীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-রেসাস বানর, উদবিড়াল, কাঠবিড়ালি, মেছো বাঘ ইত্যাদি। এছাড়া এ বনে দেখা যায় নানা প্রজাতির শাপ আর সরীসৃপ।

রাতারগুল মূলত প্রাকৃতিক বন। এরপরও বন বিভাগ হিজল, বরুণ, করচ, আর মুর্তাসহ কিছু জলসহিষ্ণু জাতের গাছ লাগিয়ে দেয় এ বনে। এছাড়াও রাতারগুলের গাছপালার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল কদম, জালি বেত, অর্জুনসহ জলসহিষ্ণু আরও প্রায় ২৫ প্রজাতির গাছপালা। সিলেট শীতল পাটির জন্য বিখ্যাত। এটি তৈরির মূল উপাদান মুর্তার বড় জোগান দেয় রাতারগুল জঙ্গল।

রাতারগুল জলাবনের একেবারে শুরুর দিকটায় মুর্তার বন। জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত এ খোলা জায়গার পুরোটাই জলে ডুবুডুবু থাকে। মুর্তার বনের পরই মূল জঙ্গল। বেশিরভাগ সময়ই এ বনের জল ঘোলাটে থাকে। তবে পার্শ্ববর্তী খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে। কয়েকদিন ঢল নামা বন্ধ থাকলে এ বনের জল স্বচ্ছ কাচের মতো রূপ নেয়।

রাতারগুল জলাবনে ঘুরে বেড়ানো যায় নৌকায়। জঙ্গলের ফাঁকে ফাঁকে ছোট নৌকা নিয়ে পুরো জঙ্গল ঘুরে আসা যায় চার থেকে পাঁচ ঘণ্টায়। স্থানীয় জেলেরা ভ্রমণ মৌসুমে পর্যটকদের নিয়ে ঘুরে বেড়ান। এ ভ্রমণ-স্থানটি পর্যটকদের কাছে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ জনপ্রিয় হলেও পর্যটকদের জন্য তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা গড়ে উঠেনি এখনও।

কোথায় থাকবেন
এ ভ্রমণে রাতযাপন করতে হবে সিলেট শহরে। জায়গাটিতে থাকার জন্য বিভিন্ন মানের বেশকিছু হোটেল আছে। শহরের নাইওরপুল এলাকায় হোটেল ফরচুন গার্ডেন , জেল সড়কে হোটেল ডালাস , ভিআইপি সড়কে হোটেল হিলটাউন , লিঙ্ক রোডে হোটেল গার্ডেন ইন , আম্বরখানায় হোটেল পলাশ, , দরগা এলাকায় হোটেল দরগাগেট, হোটেল উর্মি , জিন্দাবাজারে হোটেল মুন লাইট, তালতলায় গুলশান সেন্টার ইত্যাদি। এসব হোটেলে ৫০০ থেকে ৪০০০ টাকায় রাতযাপনের ব্যবস্থা আছে।

কীভাবে যাবেন
রাতারগুল ভ্রমণে যেতে প্রথমে আসতে হবে সিলেট শহরে। সড়ক, রেল ও আকাশপথে ঢাকা থেকে সরাসরি সিলেট আসা যায়। চট্টগ্রাম থেকেও সিলেটে আসার ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা আছে। সড়কপথে ঢাকার ফকিরাপুল, সায়েদাবাদ ও মহাখালী বাসস্টেশন থেকে সিলেটের বাসগুলো ছাড়ে। এ পথে গ্রিন লাইন পরিবহন, সৌদিয়া, এস আলম পরিবহন, শ্যামলি পরিবহন ও এনা পরিবহনের এসি বাস চলাচল করে। ভাড়া ৮০০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা। এছাড়া শ্যামলী পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, ইউনিক সার্ভিস, এনা পরিবহনের নন এসি বাসও সিলেটে যায়। ভাড়া ৪০০-৪৫০ টাকা।

ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস, সপ্তাহের প্রতিদিন দুপুর ২টায় ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস এবং বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ৯টা ৫০ মিনিটে ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস।

শুক্রবার ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৪টায় ছাড়ে কালনী এক্সপ্রেস। ভাড়া ১৫০ থেকে ১ হাজার ১৮ টাকা। এছাড়া চট্টগ্রাম থেকে সোমবার ছাড়া প্রতিদিন সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে যায় পাহাড়িকা এক্সপ্রেস এবং শনিবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে উদয়ন এক্সপ্রেস। ভাড়া ১৪৫ থেকে ১ হাজার ১৯১ টাকা।

সারাদিন ভ্রমণের জন্য জায়গাটিতে পাওয়া যাবে ছোট ছোট খোলা নৌকা। এক বেলা জঙ্গলে বেড়ানোর জন্য প্রতিটি নৌকার ভাড়া ৩০০-৭০০ টাকা। সিলেটের আম্বরখানা, শাহজালাল মাজার থেকে সাহেববাজার কিংবা চৌমুহনী লোকাল অটোরিকশা যায়। জনপ্রতি ভাড়া ৩৫-৪৫ টাকা। রিজার্ভ নিয়ে গেলে ২৫০-৩০০ টাকা।

 

প্রতিক্ষণ/এডি/আকিদুল

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য

20G